কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিকটে ড. মোস্তাফা হাজেরা ফাউন্ডেশনের বিনামূল্যে সেবার এ্যাম্বুলেন্সের ওপর নিন্দনীয় হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার সময় এ্যাম্বুলেন্সটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নোয়াখালীগামী এক রোগীর মৃতদেহ বহন করছিল। এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গ্রেটার নোয়াখালী ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার একটি রেস্টুরেন্টে গ্রেটার নোয়াখালী ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এসময় সংগঠনটির মূখ্য সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, এটি কেবল একটি মানবিক সেবার ওপর আঘাত নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে এক জঘন্য ও লজ্জাজনক ঘটনা।
জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় রোগী পরিবহনের পথে রোগীর অবস্থা অবনতিশীল হলে ড. মোস্তাফা হাজেরা ফাউন্ডেশনের বিনামূল্যে সেবার এ্যাম্বুলেন্সটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই রোগীকে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মৃতদেহ নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সটি নোয়াখালী ফেরার প্রস্তুতির সময় কুমিল্লার কিছু কুচক্রী ব্যক্তি নোয়াখালীর এ্যাম্বুলেন্স বলে চালক ও স্বজনদের ওপর শারীরিক হামলা চালায়। আহত চালক পরবর্তীতে সাহসিকতার সঙ্গে মৃতদেহটি নিরাপদে নোয়াখালী ফিরিয়ে আনেন।
গ্রেটার নোয়াখালী ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মূখ্য সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম এই হামলাকে দুই জেলার ঐতিহাসিক সম্প্রীতি নষ্টের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করে বলেন, ড. মোস্তাফা হাজেরা ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক মানবিক প্রতিষ্ঠান, যা গত এক দশক ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে সেবা দিয়ে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা কোভিড, বন্যা ও বিভিন্ন দুর্যোগে কুমিল্লা, ফেনী, সিলেট ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় সম্মুখসারিতে কাজ করেছে।
তিনি কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোর আহ্বান জানিয়ে ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে জোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এই হামলা একটি ক্ষুদ্র মহলের উসকানিমূলক অপচেষ্টা। কুমিল্লা ও নোয়াখালীর মানুষ ইতিহাসে সবসময় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল এবং থাকবে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, গুজব, আঞ্চলিক বিদ্বেষ বা বিভাজনমূলক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন। ঐক্য, মানবতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাই আমাদের জাতীয় অগ্রগতির পথ।
সরকারকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত স্বতন্ত্র “নোয়াখালী বিভাগ” ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমরা কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার বিপক্ষে নই, বরং দুই জেলার উন্নয়নই পরস্পরের পরিপূরক। নোয়াখালী ও কুমিল্লা উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়েনের পথে এগিয়ে নিতে হবে। তবে ভুলুয়ার সীমারেখার ভৌগোলিক অবস্থান বর্তমান নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার সমৃদ্ধ অর্থনীতি ও আঞ্চলিক পরিবেশ বিবেচনা করে স্বতন্ত্র নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানান জহিরুল ইসলাম।
জহিরুল ইসলাম বলেন, ড. মোস্তাফা হাজেরা ফাউন্ডেশন ও গ্রেটার নোয়াখালী ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন উভয়ই মানবিক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কোনো হামলা বা ভয়ভীতি আমাদের মানবিক যাত্রা থামাতে পারবে না, আমরা থামব না। তাই বিভেদের ফাঁদে না পড়ে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও মানবিক সম্পর্ক জোরদারের আহবান জানান এই সমাজসেবক।
সংবাদ সম্মেলনে সোনাইমুড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আল মাহমুদ, সাবেক সভাপতি শামছুল আরেফিন জাফর, সোনাইমুড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাকসুদ আলম’সহ জেলা ও উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্টনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।